Dhaka ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিম নিয়ে যত প্রশ্ন

Reporter Name
  • আপডেট : ০৭:৩৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪
  • / 41

ছোটবেলায় পরীক্ষার দিন সকালে দাদী বলতেন, ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে হয় না। তাহলে নাকি পরীক্ষায় ডিমের মত শূণ্য পায়। তখন মা বলতেন, ডিম আর কলা খাও। তাহলে ১ আর ০ মিলে দশ হবে। আসলে কি ডিম খেলে শূন্য পায়? না। বরং ডিমের অনেক পুষ্টিগুণ আছে। যা শরীরে শক্তি ও মাথায় বুদ্ধি বাড়ায়
এখন চল ডিম নিয়ে আরো কিছু প্রশ্ন করা যাক। ১. কোন ডিমের পুষ্টি বেশি? সাদা নাকি লাল? ২. ডিমের কুসুমের রং হালকা বা গাঢ় হয় কেন? কোনটি বেশি সুস্বাদু? ৩. ডিম কীভাবে খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর? ভাজি, সিদ্ধ, নাকি পোচ? ৪. ডিম বেশি খেলে কী হয়? হ্যাঁ প্রশ্ন অনেক হয়েছে, এখন উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

আরো পড়ুন এবং জানুন : রমজানের শিক্ষা পুরো বছর ধরে রাখবেন যেভাবে

১. কোন ডিমের পুষ্টি বেশি?

সাদা নাকি লাল? আমরা বাজারে দুই রঙের ডিম বেশি দেখি। সাদা আর লালচে বাদামী। বাদামী ডিমের দাম সাদার তুলনায় কিছুটা বেশি হয়। ফলে অনেকে মনে করে বাদামী ডিমের স্বাদ উপকারিতা বেশি। আরেকটি তথ্য জানলে অবাক হবে। সেটা হল সাদা ও লাল ছাড়াও নীল ও সবুজ রঙের ডিম হয়। আরাউকানা নামের এক জাতের মুরগী আছে, যারা সবুজ বা নীল রঙের ডিম পাড়ে।
এখন প্রশ্ন হল কোনটি বেশি উপকারী? নিউ ইয়র্কের কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গবেষক জানিয়েছেন, সাদা ডিম এবং বাদামী ডিমের মধ্যে পুষ্টিগুণের বিচারে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বাদামী ডিমে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড একটু বেশি রয়েছে। তবে সেই বেশির পরিমাণ এতটাই অল্প যে সেটা ধরা যায় না। সেজন্য বলা যেতে পারে, সাদা আর বাদামী দুই ডিমেই সমান পুষ্টিগুণ রয়েছে। কর্নেল ইউনিভার্সিটির প্রাণীবিজ্ঞানের ভিজিটিং ফেলো ট্রো সকল ডিমের পুষ্টিগুণ না হয় এক, কিল্প স্বাদ? গবেষকদের মতে, ডিমের স্বাদ নির্ভর করে মুরগির খাদ্যাভ্যাসের উপর। কিছু মুরগী নিজে ঘুরে ঘুরে খায়। আবার খামারে মুরগির চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়ানো হয়। তাই স্বাদে ভিন্নতা আসে। এজন্য আমরা সচরাচর আমাদের বাড়িতে পালন করা দেশী মুরগির ডিম সাদা দেখি। কেননা বাড়িতে মুরগীকে তেমন পুষ্টিকর দেয়া হয়না। তারা ঘুরেফিরে তাদের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা পূরণ করে। তাই তাদের ডিমের আকৃতিও ছোট হয়ে থাকে। যদি সাদা ও লাল ডিম পাড়া মুরগীকে একই খাবার খাওয়ানো হয়, তবে স্বাদের খুব নাকটা পার্থক্য বোঝা যাবে না এবং গুণগত মানেও তেমন হেরফের হবে কোন
তাহলে লাল বা বাদামী ডিমের দাম কেন বেশি? এটি জানার জন্য আগে মুরগির ডিম উৎপাদন প্রক্রিয়া জানতে হবে। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি এক্সটেনশন এ প্রক্রিয়ার একটি চিত্র দিয়েছে। তাদের হিসাবে একটি ডিম তৈরি হতে প্রায় ২৬ ঘণ্টা সময় লাগে। সাধারণভাবে জীবনের প্রথম দুই বছর মুরগী দৈনিক একটি করে ডিম দিতে পাবে। সুনোষ্ট্রের কৃষি বিভাগের খাদ্য প্রযুক্তির গবেষক তিনা জোনস বলেন, ডিমের খোসা তৈরি হতে কমপক্ষে ২০ ঘণ্টা সময় লাগে। ডিম তৈরির একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে যোগ হয় রঙ। এটি ঘরে রঙ করার মতো একটা ব্যাপার। সব ডিমই প্রাথমিকভাবে সাদা হয়। সাদা ডিম রঙ করার ধাপটি এড়িয়ে যায়।
জোনস বলেন, বাদামী ডিমের দাম বেশি হওয়ার পেছনের রহস্য এখানেই। ডিমে বাদামী রঙ দিতে মুরগীর বেশি পরিমাণে পুষ্টি ও শক্তি খরচ হয়। এ কারণে বাদামী লেয়ার মুরগীর খাবারের পেছনে খামারির বেশি খরচ করতে হয়। আর এই ডিমের দামও বেশি হয়।

২. ডিমের কুসুমের রং হালকা বা গাঢ় হয় কেন?

ডিম আজার সময় ডিমের খোসা হালকা ফাটিয়ে ভিওরের কুসুম বের কুসুমের দিকে খেয়াল করলে দেখবে কোনটি হলুদ বর্ণের হালকা রঙের। আবার কোনটি তুলনামূলক গাঢ় কমলা বঙের হয়। অনেকে বলেন, বস্তু ভিন্ন হওয়ার কারণে ডিমের পুষ্টিগুণও আলাদা হয়। ডিমের কুসুমের রঙ যত গাড় হয়, ডিম তত স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয় এটি কি আসলেই সত্যি? চল জানা যাক

আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর গবেষকরা ডিমের কুসুম নিয়ে নিজেদের গবেষণার জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিমের কুসুমের রং মূলত নির্ভর করে মুরগী কী খাচ্ছে তার ওপর। ক্যারোটিনয়েড নামের এক রকম রাসায়নিকের প্রভাবে ডিমের কুসুমের রং কমণা হয়। মুরগি যত বেশি খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবে, ডিমের কুসুমের রং ততই গাঢ় হবে। অনেক খামারে মুরগিকে ক্যারোটিনয়েও সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া হয়। সেকারণে সেসব মুরগির ডিমের কুসুমের রঙও গাঢ় হয়। আর এ ধরনের মুরগির ডিমের কুসুমের রঙও গাঢ় হয়। তবে কুসুমের রঙে ডিমের পুষ্টিগুণে কোন পার্থক্য হয় না।

৩. ডিম কীভাবে খেলে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত হবে?

সিন্ধ, পোচ নাকি ভাজি? ডিম প্রোটিনের অন্যতম উৎস। সহজলভ্য ও পুষ্টিকর হওয়ায় আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় এটি সাধারণত থাকে। ডিম আমরা সবাই খেলেও খাওয়ার ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। কেউ কেজে করেন, কেউ পেচ থেকে। যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন সবগুলোতেই প্রায় সমান পুষ্টি পাওয়া যাম। ডিম ভাজি সাধারণত ড্রিম ভেতে পিঁয়াজ, মরিচ, লবণ দিয়ে তেনে ভাজাকে ডিম ভাজি বলা হয়। এটি সিদ্ধ বা পোচের তুলনায় সুস্বাদু হয়। ডিম ভাজার ক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত তেল ব্যবহার হয় তখন সেটি স্বাস্থ্যসম্মত হবে না। তেল দিয়ে ভাজা হলে ডিমের পুষ্টি উপাদান কমবে না, কিন্তু অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেড়ে যাবে। যেটি শরীরের জন্য অতিকর। সেক্ষেত্রে একটু অল্প তেলে ডিম ভাজলে স্বাস্থ্যসম্মত হবে। আবার কেউ সসন্দ করেন সিদ্ধ
ডিম পোচ। ডিম পোচের ক্ষেত্রে সাধারণত ডিম ভেঙে তেলের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এর কুসুম আন্ত ও নরম নরম থাকে। যদি অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজা হয় তবে সেটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণ হতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
সিদ্ধ ডিম। সিদ্ধ ডিম খাওয়া সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত মনে করা হয়। কারণ এটিতে তেল ব্যবহার করা হয় না। ডিম অল্প সিদ্ধ বা দেশি সিদ্ধ যেভাবেই খাওয়া হোক পুষ্টিমান একই থাকে, পরিবর্তন হয় না। তবে কাঁচা ডিমে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। অল্প সিদ্ধ অর্থাৎ ৩-৪ মিনিট সিদ্ধ করলে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে। তাই ৭-৮ মিনিট সিদ্ধ করে খাওয়া হলে সেটা সবচেয়ে ভালো। আবার কেউ ১০-১২ মিনিট সিদ্ধ করে শক্ত কুসুম খেতে মইলে খেতে পারবেন।
অর্থাৎ ক্রিম পোচ, ভাজা, সিদ্ধ যেভাবে যাওয়া হোক সেটা পুষ্টিসমৃদ্ধ হবে যদি রান্নার পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত হয় ।এগুনো ছাড়া আরও কিছু উপায়ে ডিম যেনে ডিমের পুষ্টিমূল্য বৃদ্ধি পায়। যেমন। অনেক সময় বাচ্চারা ডিম খেতে চাষ না। সেক্ষেত্রে ডিমের সঙ্গে যদি বিভিন্ন সবজি যোগ করে ভাজা হয় না পনির, চিজ, এক কাপ দুধ যোগ করে বেক করা হয় তখন সেটি খেতেও সুস্বাদু হবে। পাশাপাশি এটি হবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।

৪. ডিম বেশি খেলে কী হয়?

একজন মানুষ দিনে কয়টা ডিম খেতে পারেন সেটা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থার ওপর। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত
একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন একটা ডিম যেতে পারেন। এ ছাড়াও ২-৩ টি ডিমের অংশ খেতে পারেন। তাতে স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না। হজম শক্তি ভালো থাকলে দিনে দুই থেকে তিনটি ডিম যাওয়া যেতে পারে। ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা সতর্কতার জন্য ডাইনে সপ্তাহে ৪ দিন ডিমের কুসুমসহ এবং বাকি ৩ দিন ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশ খেতে পাবেন যাদের রক্তের চর্বি বেশি, কোলেস্টেরলের সমস্যা, কিডনির সমস্যা সহ ইত্যাদি অন্য যেকোনো ধরনের সমস্যা আছে তাদের শারীরিক অবস্থার
ওপর নির্ভর করে তারা পরিমিত পরিমাণে ডিম খেতে পারেন। অতি মাত্রায় ডিম খেলে পরীরের ক্ষতি পারে। কুসুমসহ অতিরিক্ত ডিম খেলে ওজন বেড়ে যায়। ডিম বেশি খেলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডিমের কুসুম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। লেখা যার, অনেক সময় রোগীকে ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে সাদা অংশ থেতে বলা হয়। আবার কিছুদিন ডিমের কুসুমসহ খেতে বলা হয়। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম। হবে।
শেষের কথা: ডিম আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি খানার। আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমরা নিয়মিত ডিম খেতে পারি। তবে প্রবাদে আছে, excess of everything is bad ‘অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ। তাই শরীরের গঠন ও শরীরিক অবস্থা অনুপাতে আমাদের ডিম খাওয়া উচিত

আরো পড়ুন এবং জানুন : মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘আল-কুদস’

শেয়ার করুন

ডিম নিয়ে যত প্রশ্ন

আপডেট : ০৭:৩৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

ছোটবেলায় পরীক্ষার দিন সকালে দাদী বলতেন, ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে হয় না। তাহলে নাকি পরীক্ষায় ডিমের মত শূণ্য পায়। তখন মা বলতেন, ডিম আর কলা খাও। তাহলে ১ আর ০ মিলে দশ হবে। আসলে কি ডিম খেলে শূন্য পায়? না। বরং ডিমের অনেক পুষ্টিগুণ আছে। যা শরীরে শক্তি ও মাথায় বুদ্ধি বাড়ায়
এখন চল ডিম নিয়ে আরো কিছু প্রশ্ন করা যাক। ১. কোন ডিমের পুষ্টি বেশি? সাদা নাকি লাল? ২. ডিমের কুসুমের রং হালকা বা গাঢ় হয় কেন? কোনটি বেশি সুস্বাদু? ৩. ডিম কীভাবে খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর? ভাজি, সিদ্ধ, নাকি পোচ? ৪. ডিম বেশি খেলে কী হয়? হ্যাঁ প্রশ্ন অনেক হয়েছে, এখন উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

আরো পড়ুন এবং জানুন : রমজানের শিক্ষা পুরো বছর ধরে রাখবেন যেভাবে

১. কোন ডিমের পুষ্টি বেশি?

সাদা নাকি লাল? আমরা বাজারে দুই রঙের ডিম বেশি দেখি। সাদা আর লালচে বাদামী। বাদামী ডিমের দাম সাদার তুলনায় কিছুটা বেশি হয়। ফলে অনেকে মনে করে বাদামী ডিমের স্বাদ উপকারিতা বেশি। আরেকটি তথ্য জানলে অবাক হবে। সেটা হল সাদা ও লাল ছাড়াও নীল ও সবুজ রঙের ডিম হয়। আরাউকানা নামের এক জাতের মুরগী আছে, যারা সবুজ বা নীল রঙের ডিম পাড়ে।
এখন প্রশ্ন হল কোনটি বেশি উপকারী? নিউ ইয়র্কের কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গবেষক জানিয়েছেন, সাদা ডিম এবং বাদামী ডিমের মধ্যে পুষ্টিগুণের বিচারে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বাদামী ডিমে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড একটু বেশি রয়েছে। তবে সেই বেশির পরিমাণ এতটাই অল্প যে সেটা ধরা যায় না। সেজন্য বলা যেতে পারে, সাদা আর বাদামী দুই ডিমেই সমান পুষ্টিগুণ রয়েছে। কর্নেল ইউনিভার্সিটির প্রাণীবিজ্ঞানের ভিজিটিং ফেলো ট্রো সকল ডিমের পুষ্টিগুণ না হয় এক, কিল্প স্বাদ? গবেষকদের মতে, ডিমের স্বাদ নির্ভর করে মুরগির খাদ্যাভ্যাসের উপর। কিছু মুরগী নিজে ঘুরে ঘুরে খায়। আবার খামারে মুরগির চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়ানো হয়। তাই স্বাদে ভিন্নতা আসে। এজন্য আমরা সচরাচর আমাদের বাড়িতে পালন করা দেশী মুরগির ডিম সাদা দেখি। কেননা বাড়িতে মুরগীকে তেমন পুষ্টিকর দেয়া হয়না। তারা ঘুরেফিরে তাদের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা পূরণ করে। তাই তাদের ডিমের আকৃতিও ছোট হয়ে থাকে। যদি সাদা ও লাল ডিম পাড়া মুরগীকে একই খাবার খাওয়ানো হয়, তবে স্বাদের খুব নাকটা পার্থক্য বোঝা যাবে না এবং গুণগত মানেও তেমন হেরফের হবে কোন
তাহলে লাল বা বাদামী ডিমের দাম কেন বেশি? এটি জানার জন্য আগে মুরগির ডিম উৎপাদন প্রক্রিয়া জানতে হবে। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি এক্সটেনশন এ প্রক্রিয়ার একটি চিত্র দিয়েছে। তাদের হিসাবে একটি ডিম তৈরি হতে প্রায় ২৬ ঘণ্টা সময় লাগে। সাধারণভাবে জীবনের প্রথম দুই বছর মুরগী দৈনিক একটি করে ডিম দিতে পাবে। সুনোষ্ট্রের কৃষি বিভাগের খাদ্য প্রযুক্তির গবেষক তিনা জোনস বলেন, ডিমের খোসা তৈরি হতে কমপক্ষে ২০ ঘণ্টা সময় লাগে। ডিম তৈরির একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে যোগ হয় রঙ। এটি ঘরে রঙ করার মতো একটা ব্যাপার। সব ডিমই প্রাথমিকভাবে সাদা হয়। সাদা ডিম রঙ করার ধাপটি এড়িয়ে যায়।
জোনস বলেন, বাদামী ডিমের দাম বেশি হওয়ার পেছনের রহস্য এখানেই। ডিমে বাদামী রঙ দিতে মুরগীর বেশি পরিমাণে পুষ্টি ও শক্তি খরচ হয়। এ কারণে বাদামী লেয়ার মুরগীর খাবারের পেছনে খামারির বেশি খরচ করতে হয়। আর এই ডিমের দামও বেশি হয়।

২. ডিমের কুসুমের রং হালকা বা গাঢ় হয় কেন?

ডিম আজার সময় ডিমের খোসা হালকা ফাটিয়ে ভিওরের কুসুম বের কুসুমের দিকে খেয়াল করলে দেখবে কোনটি হলুদ বর্ণের হালকা রঙের। আবার কোনটি তুলনামূলক গাঢ় কমলা বঙের হয়। অনেকে বলেন, বস্তু ভিন্ন হওয়ার কারণে ডিমের পুষ্টিগুণও আলাদা হয়। ডিমের কুসুমের রঙ যত গাড় হয়, ডিম তত স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয় এটি কি আসলেই সত্যি? চল জানা যাক

আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর গবেষকরা ডিমের কুসুম নিয়ে নিজেদের গবেষণার জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিমের কুসুমের রং মূলত নির্ভর করে মুরগী কী খাচ্ছে তার ওপর। ক্যারোটিনয়েড নামের এক রকম রাসায়নিকের প্রভাবে ডিমের কুসুমের রং কমণা হয়। মুরগি যত বেশি খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবে, ডিমের কুসুমের রং ততই গাঢ় হবে। অনেক খামারে মুরগিকে ক্যারোটিনয়েও সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া হয়। সেকারণে সেসব মুরগির ডিমের কুসুমের রঙও গাঢ় হয়। আর এ ধরনের মুরগির ডিমের কুসুমের রঙও গাঢ় হয়। তবে কুসুমের রঙে ডিমের পুষ্টিগুণে কোন পার্থক্য হয় না।

৩. ডিম কীভাবে খেলে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত হবে?

সিন্ধ, পোচ নাকি ভাজি? ডিম প্রোটিনের অন্যতম উৎস। সহজলভ্য ও পুষ্টিকর হওয়ায় আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় এটি সাধারণত থাকে। ডিম আমরা সবাই খেলেও খাওয়ার ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। কেউ কেজে করেন, কেউ পেচ থেকে। যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন সবগুলোতেই প্রায় সমান পুষ্টি পাওয়া যাম। ডিম ভাজি সাধারণত ড্রিম ভেতে পিঁয়াজ, মরিচ, লবণ দিয়ে তেনে ভাজাকে ডিম ভাজি বলা হয়। এটি সিদ্ধ বা পোচের তুলনায় সুস্বাদু হয়। ডিম ভাজার ক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত তেল ব্যবহার হয় তখন সেটি স্বাস্থ্যসম্মত হবে না। তেল দিয়ে ভাজা হলে ডিমের পুষ্টি উপাদান কমবে না, কিন্তু অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেড়ে যাবে। যেটি শরীরের জন্য অতিকর। সেক্ষেত্রে একটু অল্প তেলে ডিম ভাজলে স্বাস্থ্যসম্মত হবে। আবার কেউ সসন্দ করেন সিদ্ধ
ডিম পোচ। ডিম পোচের ক্ষেত্রে সাধারণত ডিম ভেঙে তেলের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এর কুসুম আন্ত ও নরম নরম থাকে। যদি অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজা হয় তবে সেটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণ হতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
সিদ্ধ ডিম। সিদ্ধ ডিম খাওয়া সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত মনে করা হয়। কারণ এটিতে তেল ব্যবহার করা হয় না। ডিম অল্প সিদ্ধ বা দেশি সিদ্ধ যেভাবেই খাওয়া হোক পুষ্টিমান একই থাকে, পরিবর্তন হয় না। তবে কাঁচা ডিমে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। অল্প সিদ্ধ অর্থাৎ ৩-৪ মিনিট সিদ্ধ করলে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে। তাই ৭-৮ মিনিট সিদ্ধ করে খাওয়া হলে সেটা সবচেয়ে ভালো। আবার কেউ ১০-১২ মিনিট সিদ্ধ করে শক্ত কুসুম খেতে মইলে খেতে পারবেন।
অর্থাৎ ক্রিম পোচ, ভাজা, সিদ্ধ যেভাবে যাওয়া হোক সেটা পুষ্টিসমৃদ্ধ হবে যদি রান্নার পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত হয় ।এগুনো ছাড়া আরও কিছু উপায়ে ডিম যেনে ডিমের পুষ্টিমূল্য বৃদ্ধি পায়। যেমন। অনেক সময় বাচ্চারা ডিম খেতে চাষ না। সেক্ষেত্রে ডিমের সঙ্গে যদি বিভিন্ন সবজি যোগ করে ভাজা হয় না পনির, চিজ, এক কাপ দুধ যোগ করে বেক করা হয় তখন সেটি খেতেও সুস্বাদু হবে। পাশাপাশি এটি হবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।

৪. ডিম বেশি খেলে কী হয়?

একজন মানুষ দিনে কয়টা ডিম খেতে পারেন সেটা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থার ওপর। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত
একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন একটা ডিম যেতে পারেন। এ ছাড়াও ২-৩ টি ডিমের অংশ খেতে পারেন। তাতে স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না। হজম শক্তি ভালো থাকলে দিনে দুই থেকে তিনটি ডিম যাওয়া যেতে পারে। ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা সতর্কতার জন্য ডাইনে সপ্তাহে ৪ দিন ডিমের কুসুমসহ এবং বাকি ৩ দিন ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশ খেতে পাবেন যাদের রক্তের চর্বি বেশি, কোলেস্টেরলের সমস্যা, কিডনির সমস্যা সহ ইত্যাদি অন্য যেকোনো ধরনের সমস্যা আছে তাদের শারীরিক অবস্থার
ওপর নির্ভর করে তারা পরিমিত পরিমাণে ডিম খেতে পারেন। অতি মাত্রায় ডিম খেলে পরীরের ক্ষতি পারে। কুসুমসহ অতিরিক্ত ডিম খেলে ওজন বেড়ে যায়। ডিম বেশি খেলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডিমের কুসুম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। লেখা যার, অনেক সময় রোগীকে ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে সাদা অংশ থেতে বলা হয়। আবার কিছুদিন ডিমের কুসুমসহ খেতে বলা হয়। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম। হবে।
শেষের কথা: ডিম আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি খানার। আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমরা নিয়মিত ডিম খেতে পারি। তবে প্রবাদে আছে, excess of everything is bad ‘অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ। তাই শরীরের গঠন ও শরীরিক অবস্থা অনুপাতে আমাদের ডিম খাওয়া উচিত

আরো পড়ুন এবং জানুন : মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘আল-কুদস’