Dhaka ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু তুলে অবৈধভাবে রাজশাহীতে মজুত

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট : ০২:৩৯:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • / 49

চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকে বালু তুলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সারাংপুরে ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে মজুত করা হচ্ছে। এরপর বেআইনিভাবে মজুতকৃত বালু পরিবহণের মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় করা হচ্ছে বিক্রি। এর ফলে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুইটি বালুমহালের মূল ইজারাদার বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ঘটনায় গোদাগাড়ীতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি সম্পর্কে রাজশাহীর ইজারাদার মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুখলেসুর রহমান মুকুল গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গোদাগাড়ী থানার ওসিকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু ইউএনও এবং ওসি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের লোকজন।

ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুখলেসুর রহমান মুকুল সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এক বছরের জন্য (১৪৩১ সন) রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় দুটি বালুমহাল ইজারা পান। এরপর ১ বৈশাখ জেলা প্রশাসন ওই দুইটি বালুমহাল তাকে বুঝিয়ে দেয়। এরপর তিনি বালু উত্তোলন শুরু করেন।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীর তীর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে  চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাণীনগরে আরেকটি বালুমহাল রয়েছে। এই বালুমহালের ইজারাদার মেসার্স দাদু ভাই কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী রাসেল এবং তার লোকজন রাণীনগর থেকে বালু উত্তোলন করে গোদাগাড়ীর পৌরসভার সারাংপুর জোতগোশাই নামক স্থানে ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে মজুত, পরিবহণ এবং বিক্রি করছেন। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বেআইনি। আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি বালুমহালের একটি নির্দিষ্ট চৌহদ্দি আছে। এতে বালু উত্তোলন এবং মজুদ ও বিক্রির ব্যাপারেও রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজশাহীর ইজারাদার মুখলেসুর রহমান মুকুল বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাণীনগর বালুমহালের অবস্থান। বিধান অনুযায়ী যে জেলায় বালুমহালের স্থান সেখানেই মজুত, পরিবহণ এবং বিক্রি করতে হবে। এছাড়া নিয়ম ভেঙে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রাণীনগর বালুমহালের ইজারাদার রাসেল এবং তার লোকজন নিয়ম-কানুন মানছেন না। তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে বালু মজুদ, পরিবহন এবং বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, আমি দুটি বালুমহালে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারামূল্য, ভ্যাট এবং আয়কর বাবদ সরকারকে ১৮ কোটি টাকা প্রদান করেছি। কিন্তু বালুমহালে বালু উত্তোলন শুরুর পর থেকেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করছি। বিষয়টি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইজারাদার রাসেলের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি কিছুই মানছেন না। স্থানীয় প্রশাসনকে বলার পরেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স দাদু ভাই কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী রাসেল বলেন, আমার এলাকায় নৌকা ঢুকছে না। এ কারণে গোদাগাড়ীর সারাংপুরে বালু মজুত করা হচ্ছে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে বালুমহাল আইন ভঙ্গের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেটি ভিত্তিহীন। নিয়ম-কানুন মেনেই বালু মজুত, পরিবহণ ও বিক্রি করা হচ্ছে। আর ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে বালু মজুতের অভিযোগও বানোয়াট। কারণ ওয়াসায় বালু সরবরাহের কারণে সেখানে বালু মজুত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গোদাগাড়ীর ইউএনও আতিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে এবং সেটি বালুমহাল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু তুলে অবৈধভাবে রাজশাহীতে মজুত

আপডেট : ০২:৩৯:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকে বালু তুলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সারাংপুরে ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে মজুত করা হচ্ছে। এরপর বেআইনিভাবে মজুতকৃত বালু পরিবহণের মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় করা হচ্ছে বিক্রি। এর ফলে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুইটি বালুমহালের মূল ইজারাদার বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ঘটনায় গোদাগাড়ীতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি সম্পর্কে রাজশাহীর ইজারাদার মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুখলেসুর রহমান মুকুল গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গোদাগাড়ী থানার ওসিকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু ইউএনও এবং ওসি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের লোকজন।

ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুখলেসুর রহমান মুকুল সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এক বছরের জন্য (১৪৩১ সন) রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় দুটি বালুমহাল ইজারা পান। এরপর ১ বৈশাখ জেলা প্রশাসন ওই দুইটি বালুমহাল তাকে বুঝিয়ে দেয়। এরপর তিনি বালু উত্তোলন শুরু করেন।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীর তীর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে  চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাণীনগরে আরেকটি বালুমহাল রয়েছে। এই বালুমহালের ইজারাদার মেসার্স দাদু ভাই কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী রাসেল এবং তার লোকজন রাণীনগর থেকে বালু উত্তোলন করে গোদাগাড়ীর পৌরসভার সারাংপুর জোতগোশাই নামক স্থানে ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে মজুত, পরিবহণ এবং বিক্রি করছেন। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বেআইনি। আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি বালুমহালের একটি নির্দিষ্ট চৌহদ্দি আছে। এতে বালু উত্তোলন এবং মজুদ ও বিক্রির ব্যাপারেও রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজশাহীর ইজারাদার মুখলেসুর রহমান মুকুল বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাণীনগর বালুমহালের অবস্থান। বিধান অনুযায়ী যে জেলায় বালুমহালের স্থান সেখানেই মজুত, পরিবহণ এবং বিক্রি করতে হবে। এছাড়া নিয়ম ভেঙে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রাণীনগর বালুমহালের ইজারাদার রাসেল এবং তার লোকজন নিয়ম-কানুন মানছেন না। তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে বালু মজুদ, পরিবহন এবং বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, আমি দুটি বালুমহালে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারামূল্য, ভ্যাট এবং আয়কর বাবদ সরকারকে ১৮ কোটি টাকা প্রদান করেছি। কিন্তু বালুমহালে বালু উত্তোলন শুরুর পর থেকেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করছি। বিষয়টি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইজারাদার রাসেলের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি কিছুই মানছেন না। স্থানীয় প্রশাসনকে বলার পরেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স দাদু ভাই কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী রাসেল বলেন, আমার এলাকায় নৌকা ঢুকছে না। এ কারণে গোদাগাড়ীর সারাংপুরে বালু মজুত করা হচ্ছে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে বালুমহাল আইন ভঙ্গের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেটি ভিত্তিহীন। নিয়ম-কানুন মেনেই বালু মজুত, পরিবহণ ও বিক্রি করা হচ্ছে। আর ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে বালু মজুতের অভিযোগও বানোয়াট। কারণ ওয়াসায় বালু সরবরাহের কারণে সেখানে বালু মজুত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গোদাগাড়ীর ইউএনও আতিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে এবং সেটি বালুমহাল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।